বিধানসভায় গোলমালের জেরে বিজেপির চার বিধায়ককে সাসপেন্ড করলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মুখ্যসচেতক শঙ্কর ঘোষের পাশাপাশি বিধায়ক মনোজ ওরাঁও, দীপক বর্মন এবং অগ্নিমিত্রা পাল সাসপেন্ড হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
সাসপেন্ড হওয়া বিধায়কদের বিধানসভা থেকে বের করতে গেলে তাঁদের সঙ্গে মার্শালদের প্রবল ধস্তাধস্তি হয় ৷ ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন বিজেপিপর অন্য বিধায়করাও ৷ পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের মতো কেউ কেউ মার্শালদের কলার ধরেন বলে অভিযোগ ৷ গোলমালের সময় বিজেপির মিহির গোস্বামী মাটিতে পড়ে যান ৷ তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শঙ্কর ৷ তাঁর চোখ থেকে চশমা খুলে পড়ে যায় ৷ ভিড়ের চাপে তাঁর চশমাটি ভেঙে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ পরে এ নিয়ে স্পিকারের কাছে অভিযোগও জানান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷
সোমবার বিজেপির পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক শঙ্করকে ‘মেনশন’ পর্বে বলতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ জানিয়ে স্পিকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি বিধায়কেরা। পাল্টা চিৎকার শুরু করেন তৃণমূল বিধায়কেরা। স্পিকার বিমান বিজেপি বিধায়কদের সাসপেন্ড করার হুঁশিয়ারি দেন। অভিযোগ, কাগজ ছিঁড়ে ‘প্রতিবাদ’ জানান বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মন। এর মাঝেই মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘কালীগঞ্জে হারল কে?’’ এর পর বিজেপি বিক্ষোভের মাত্রা বৃদ্ধি করে বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির চার বিধায়ককে সাসপেন্ড করেন স্পিকার। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের আবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়।
এই গোলমাল যখন চলছে, তখন বিধানসভায় উপস্থিত ছিলেন না শুভেন্দু। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণদিবসের কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। বিজেপি বিধায়কদের সাসপেনশনের খবর পেয়ে তিনি উপস্থিত হন বিধানসভায়। সে সময় কক্ষ থেকে ওয়াক আউট করে বিধানসভার গেটে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁদের অভিযোগ, বিধানসভা থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভে যোগ দেন শুভেন্দু। তার পরেই স্পিকারের কাছে যান তিনি। স্পিকার বিমান জানিয়ে দেন, অধিবেশনে সমস্যা তৈরি করা যাবে না। তবে তিনি আশ্বাস দেন যে, শুভেন্দুর অভিযোগ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুভেন্দু যদিও বিধানসভার ঘটনায় শাসকদল এবং স্পিকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ক্যাডারদের দিয়ে মিহির গোস্বামীকে বার করে দেওয়া হয়েছে। একাধিক বিধায়কের উপর আক্রমণ হয়েছে।’’ তিনি এ-ও অভিযোগ করেছেন যে, ধস্তাধস্তিতে বিধায়কদের বিভিন্ন জিনিস ভেঙে গিয়েছে। তিনি সেই নিয়ে স্পিকারের দ্বারস্থ হয়েও সাহায্য পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি শঙ্কর ঘোষের চশমা, শান্তনু প্রামাণিকের চশমা, কাঞ্চন মৈত্রের ঘড়ি প্রমাণস্বরূপ স্পিকারের কাছে রেখেছি। স্পিকার বলছেন, বিরোধী দলনেতাকে বার করে দাও। এটা ভাষা!’’ শুভেন্দু অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘‘২০ জন মহিলা রক্ষী দিয়ে আমাকে ঘেরাও করা হয়। ওঁরা চেয়েছিলেন, আমি মহিলাদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়াই। আমি হাত পকেটে রেখেছিলাম। বলেছিলাম, ধাক্কা মেরে জোর করে বার করতে হবে। দাঁড়িয়ে ধর্না চালাই।’’ শুভেন্দু জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিধানসভার শেষ দিন ধর্না চলবে তাঁদের।