স্পেশাল রিপোর্ট ওয়েব ডেস্ক,
বিএপিএস হিন্দু মন্দির। সংযুক্ত আরব আমিরাতের / আমিরশাহীর রাজধানী আবুধাবিতে অবস্থিত প্রথম হিন্দু মন্দির । যা মধ্যপ্রাচ্য দেশের সবচেয়ে বড় পাথরের হিন্দু মন্দির ।এই বিশাল মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে বিএপিএস হিন্দু সংগঠন ও আমিরশাহী সরকারের সাহায্যে । ২০২৪ সালে ১৪ই ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহাসমারহে এই মন্দিরের উদ্বোধন করেন। মরুভূমির দেশে পদ্মের মতো ফুটে ওঠে এই মন্দির। মুসলিম দেশের প্রথম হিন্দু মন্দির এটি। ভারতে অযোধ্যা মন্দিরের আদলেই তৈরি হয়েছে। কত বড় জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে এই মন্দির ? কত টাকা লাগলো এই মন্দির তৈরি করতে? কি কি রয়েছে এই মন্দির প্রাঙ্গণের মধ্যে? মুসলিম দেশে এই মন্দিরের গুরুত্বই বা কতটা ? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
বিএপিএস শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দির আবুধাবির আবু মুরেখা এলাকায় আল তাফ রোড কাছে অবস্থিত। সহিষ্ণুতা ও সৌহার্দের প্রতীক হিসেবে আমিরশাহীতে এই মন্দির নির্মাণ। এই মন্দিরের জায়গাটি যেন বিশাল মরুভূমির মধ্যে পদ্মফুল ফুটে ওঠার মতো। এই মন্দিরের বিশেষত্বই হলো সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে আসতে পারে।
কারা এই মন্দির তৈরি করল আসুন জেনে নিই।
শাস্ত্রীজী মহারাজ ১১৬ বছর আগে বোচাসনবাসী অক্ষর পুরুষোত্তম স্বামীনারায়ণ সংস্থা (সংক্ষেপে বিএপিএস) প্রতিষ্ঠা করে । এই হিন্দুত্ববাদী সংস্থাটি সারা ভারত জুড়ে ১৫০০ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। চিকাগো, টরেন্টো, লন্ডন, নাইরোবি মতো বিভিন্ন জায়গায়। এমনকি ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত অক্ষরধাম মন্দিরটিও বিএপিএস সংস্থা তৈরি করে। বিএপিএস শ্রী স্বামীনারায়ণ আবুধাবি মন্দির এই হিন্দু সংগঠন তৈরি করেন। যদিও এই মন্দিরটি আবুধাবির সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির হলেও এখানে আরও তিনটি মন্দির রয়েছে।
এই ঐতিহ্যবাহী মন্দির টি ২৭ একর জমির ওপর তৈরি হয়েছে । এর উচ্চতা ১০৮ ফুট। সাতটি চূড়া বিশিষ্ট এই মন্দিরে স্বামীনারায়ণ, অক্ষর পুরুষোত্তম, রাধা কৃষ্ণ, রাম সীতা লক্ষণ, হনুমান, শিব পার্বতী, গণেশ, কার্তিক, পদ্মাবতী, জগন্নাথ দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে। বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি খোদাই করা রয়েছে, যা অত্যন্ত সুন্দর।
মন্দির কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকলেই আপনারা দেখতে পাবেন ডিভাইন আই এর ভাস্কর্য। যা দিয়ে আপনারা পুরো মন্দিরটাকে দেখতে পারবেন এক ঝলকে। এর সামনেই রয়েছে এই দুটি জলের স্রোত। হিন্দুদের পবিত্র দুই নদী গঙ্গা ও যমুনার প্রতীক হিসেবে এই দুটি জলের স্রোত বয়ে চলেছে। আরেকটু এগিয়েই প্রধান মন্দির ফটক। ৭৯.৮ মিটার লম্বা ও ৫৪. ৮ মিটার চওড়া এই মন্দির প্রাঙ্গণে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ একসাথে প্রার্থনা করতে পারেন। এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি প্রার্থনা হল, কমিউনিটি সেন্টার , বাচ্চাদের খেলার জন্য পার্ক ও একটি লাইব্রেরী ।
আপনারা জানলে অবাক হবেন আবুধাবির এই মন্দির তৈরিতে ৭০০ কোটির বেশি টাকা খরচ হয়েছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক চোখ ধাঁধানো কারুকার্য এবং ভাস্কর্যে পূর্ণ এই মন্দিরটিকে। মুসলিম দেশের বুকে এই বিশাল হিন্দু মন্দির নির্মাণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিএপিএস স্বামী নারায়ন সংস্থা । ১৮ লাখ ইঁট দিয়ে তৈরি হয়েছে এই মন্দিরটি। কুড়ি হাজার টন সাদা মার্বেল এবং গোলাপি পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতীয় মন্দির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনুযায়ী মন্দিরের নানান নকশা তৈরি হয়েছে। মন্দির নির্মাণ সুদূর ইতালি থেকে এই পাথরগুলো আমদানি করা । আশ্চর্যের বিষয় আরব থেকে সুদূর আবুধাবিতে গিয়ে গুজরাত এবং রাজস্থানের ২ হাজার শিল্পী তিন বছর ধরে এই মন্দির কারুকার্য করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এই মন্দির নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী ও বিএপিএস সংস্থাকে এই বিশাল জমি দান করে। ২০১৯ সালে এই মন্দিরের ভীত স্থাপন করা হয়। আমিরশাহী সরকার এই মন্দির নির্মাণ সাহায্য করে। বলাই যায় মুসলিম প্রধান দেশে এই হিন্দু মন্দির হিন্দুত্ববাদকে আলোকিত করবে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় এবং অটুট করবে এই স্বামীনারায়ন মন্দির। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই মন্দির নিয়ে উত্তেজনার কম নয়। উদ্বোধনের প্রথম রবিবারে ৬৫ হাজার মানুষ এই মন্দির দর্শন করতে আসেন। ভবিষ্যতে এই মন্দির পর্যটন ও হিন্দুত্ববাদকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।